আফগান যুদ্ধে ৩৯ নিরপরাধ ব্যক্তিকে অবৈধভাবে হত্যা করেছে অস্ট্রেলিয়ার এলিট ফোর্সের সদস্যরা। অকাট্য প্রমাণের ভিত্তিতে দীর্ঘ প্রতিক্ষীত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
আফগানিস্তানে অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘ চার বছর অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্স ফোর্স (এডিএফ)। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বন্দি, কৃষক এবং বেসামরিক নাগরিকদের হত্যায় স্পেশাল বাহিনীর ১৯ কর্মরত বা সাবেক সদস্যকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা জরুরি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য কিছু সেনার বাচবিচারহীন যুদ্ধ সংস্কৃতিকে দায়ী করেছে এডিএফ। মেজর জেনারেল জাস্টিস পল ব্রেরেটন তদন্ত পরিচালনা করেন। গ্রহণ করা হয় ৪০০ প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য।
তদন্তে পাওয়া যায়: জুনিয়র সেনাদের বলা হয় তাদের প্রথম হত্যাকাণ্ড কোনো বন্দিকে গুলি করার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে। এ প্রক্রিয়াটি রক্তক্ষরণ নামে পরিচিত।
ধামাচাপা দেয়ার জন্য হত্যাকাণ্ডের পর মরদেহের পাশে অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পুঁতে রাখা হতো। এগুলো ছাড়াও দুটি নিষ্ঠুর আচরণের ঘটনা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। আফগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়া তাদের আশ্বস্ত করেছে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জড়িত ছিলেন শিক্ষাবিদ সামান্থা ক্রোম্পভোয়েটস। তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্তরা ইচ্ছাকৃতভাবে বার বার যুদ্ধাপরাধের মতো নৃশংসতা চালিয়েছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ হিসেবে তালেবানকে উৎখাতে ২০০২ সাল থেকে আফগানিস্তানে অবস্থান করছে অস্ট্রেলিয়ার বাহিনী। প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক সেনারা আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করলেও পরবর্তীতে তারা বিদ্রোহীদের দমনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়।
প্রতিবেদনে কী পাওয়া গেছে? স্পেশাল বাহিনীর ২৫ জন সদস্য ২৩টি আলাদা অবৈধ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল। কেন্দ্রীয় পুলিশকে মোট ৩৬ ঘটনা তদন্তের সুপারিশ করেছে এডিএফ। এডিএফ প্রধান জেনারেল অ্যাঙ্গাস ক্যাম্পবেল বলেন, যুদ্ধের কারণে একটি হত্যাকাণ্ডও ঘটেছে-এমনটি বলা যায় না।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) তিনি বলেন, অভিযুক্তরা ভুল করে বা বিভ্রান্ত হয়ে এ কর্মকাণ্ড চালিয়েছে প্রতিবেদনে এমন অভিযোগ আনা হয়নি।
জেনারেল ক্যাম্পবেল বলেন, স্পেশাল এয়ার সার্ভিসের (এসএএস) কিছু সদস্য আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন। যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। খুবই সতর্কতা এবং গোপনীয়তা মেনে তদন্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রকাশ হওয়া তথ্য খুবই সামান্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। গেল সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী মরিসন জানান, প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ার স্পেশাল ফোর্স সম্পর্কে যে তথ্য উঠে এসেছে তা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের মেনে নিতে কষ্ট হবে। এক বিবৃতিতে আফগানিস্তান ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশন অতিসত্বর অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা এবং ক্ষতিপূরণ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গেল সপ্তাহে মরিসন আর জানান, প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্য যাচাই বাছাইয়ে একজন বিশেষ তদন্তকারী নিয়োগ দেয়া হবে। বিচার শুরুর আগে পুলিশি তদন্ত শেষ হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম।
চলতি বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) আফগান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যরা সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ করেছে অভিযোগ করে তদন্ত শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে ২০০৩ সাল থেকে আফগান সরকার, তালেবান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
২০১৬ সালে আইসিসি জানায়, গোপন আস্তানায় সিআইএ’এর তত্ত্বাবধানে টর্চারসেল পরিচালনা করেছে মার্কিন বাহিনী। আফগান সরকার বন্দিশালায় নির্যাতন চালিয়েছে। তালেবান গণহত্যা চালিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ব্রিটিশ স্পেশাল ফোর্সের বিরুদ্ধে ওঠা অবৈধ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ বিশেষভাবে খতিয়ে দেখছে যুক্তরাজ্য।